অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া খুলনার ডুমুরিয়ায় তুফানীর পরিবার শোকে স্তব্ধ

0
197

প্রতিবেদকঃ শেখ হেদায়েতুল্লাহ (খুলনা)

কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া এক সন্তানের জননী তুফানী মন্ডলের পরিবার। কেন এমন হল, কিভাবে আগুণ লাগল আর কারাই বা তাকে এভাবে হত্যা করতে চাইল নাকি নিছক একটি দুর্ঘটনা এটাই পরিবারসহ আশপাশের অধিবাসীদের ভাবিয়ে তুলেছে। ঘটনাটি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের ভদ্রা নদীর পাড়ের তুফানীর বাবা গুরুদাশ মন্ডলের বাড়িতে গত সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে ঘটে।

স্থাণীয় এলাকাবাসী ও তুফানী মন্ডলের স্বজনদের সাথে আলাপকালে জানা যায় গত ১১ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে অগ্নিদগ্ধ হন তুফানী মন্ডল। সেই রাতে তাকে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ৮দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে রোববার রাত ১১টার দিকে মৃত্যুর কাছে হার মানেন তুফানী মন্ডল। সোমবার দুপুরে তুফানীর শ্বশুরবাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার কাপালীডাঙ্গা গ্রামের কালীমন্দির শ্মশানে শেষ কৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এদিকে মঙ্গলবার সকালে ডুমুরিয়া বাজারস্থ ভদ্রা নদীর পাড়ে জে, আলী কিন্ডারগার্টেন সংলগ্ন পিতা গুরুদাশ মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে তালাবদ্ধ। প্রতিবেশীদের কাছে খবর নিলে তারা জানায় সবাই তুফানীর শ্বশুরবাড়ি কাপালীডাঙ্গা গ্রামে রয়েছেন। সেখান থেকে কাপালীডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে তুফানীর স্বামী বিজিবি সদস্য সঞ্জীব বৈরাগীর বাবা অর্থাৎ অনন্ত বৈরাগী ছাড়া আর কাউক পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন বৌমা আমার খুব ভাল ছিল। সবসময় হাসিখুশি থাকতো। পৌত্রি ( ছেলের মেয়ে) শিমলী বৈরাগী ডুমুরিয়া সদরের ডুমুরিয়া সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে । তাই বৌমা ডুমুরিয়া বাজারে বৌমা তার বাবার বাড়িতে বসবাস করে। তিনি জানান ছেলে সঞ্জীব চাকরীর সুবাদে কুমিল্লায় থাকে। কিভাবে আগুণ লেগেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন শুনেছি গ্যাস চুলায় চা তৈরী করতে গিয়ে গায়ের কাপড়ে আগুণ লাগে। পরে তাকে তার বাবাসহ প্রতিবেশি ও বাজারের লোকজন ছুটে এসে আগুণ নিভিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রতিবেশী অনিতা রানী মন্ডল বলেন ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিৎকার শুনে এগিয়ে যাই। গিয়ে শুনি তুফানীর গায়ে আগুণ লেগেছে। সে চা তৈরী করছিল। চুলা যেখানে তার উপরের তাক থেকে চাপাতির কৌটা নামাতে গেলে চুলা থেকে গায়ে আগুণ লাগে। এদিকে বাড়িতে আগুণ লাগার খবর শুনে বাজারে যাওয়া তুফানীর পিতা গুরুদাশ মন্ডল ও তার সাথে থাকা সত্যজিত চন্দ্র চন্দ দ্রুত ছুটে আসেন। তারা দেখতে পান তুফানী ঘরে সিড়ির উপর পড়ে দাপাদাপি করছে। তার শরীর আগুনে পুড়ছে। এসময়ে সত্যজিত চন্দ্র চন্দ হাত দিয়ে আগুণ নেভানোর চেষ্টা করলে তার হাত ও মুখ আগুণে ঝলসে যায়। তুফানীর বাবা গুরুদাশ মন্ডল ঘর থেকে কাঁথা এনে তুফানীর গায়ে চাপা দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। তুফানীর বাবা গুরুদাশ মন্ডল সত্যজিতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

এদিকে এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ অপ্রচার শুরু করে ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। সত্যজিত চন্দ্র চন্দের স্ত্রী ডুমুরিয়া মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সুলগ্না বসু এ বিষয়ে জানান গত সোমবার ( ১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে (সত্যজিত) টিফিন বক্স পরিবর্তন করতে বাজারে পাঠানোর মিনিট পনের পরে শুনি তার হাত ও মুখ আগুণে পুড়ে গেছে। কারণ জানতে পারি গুরুদাশ কাকার মেয়ে তুফানী অগ্নিদগ্ধ হলে তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তার হাত ও মুখ পুড়ে যায়। গুরুদাশ কাকা আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেখাশুনা করেন। অপর এক সূত্র জানায় স্থানীয় শাড়ি কাপড়ের ব্যবসায়ী স্বপন দেবনাথ তুফানী মন্ডলকে বিভিন্ন সময়ে উত্যক্ত করত। তুফানীকে কোনভাবে নিজের করায়াত্বে আনতে না পেরে জানালা দিয়ে আগুণ লাগাতে পারে। যদিও এ ঘটনাটিকে স্বপন দেবনাথ বলেন তিনি শুনেছেন তুফানী নামে এক নারী আগুণে পুড়ে মারা গেছে। তাকে তিনি কখনও উত্যক্ত করেননি। এদিকে তুফানী ভাই তুফান মন্ডলের সাথে মোরাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন দুর্ঘটনার কারণে আমার বোন মারা গেছে। এজন্য এনিয়ে জিডি বা মামলা করার কোন দরকার পড়ে না। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম বলেন যেহেতু তুফানী মন্ডল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছে সেহেতু ডুমুরিয়ায় অপমৃত্যু মামলার করার সুযোগ নই। তাছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দেয়া হয়নি। এটি দুর্ঘটনাজনিত কারণ বলে মনে হয়।

এফএম নিউজ…

আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী