প্রতিবেদকঃ শেখ হেদায়েতুল্লাহ, খুলনা
মুক্তিযুদ্ধাকালীন সময়ের স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের হেড কোয়ার্টার ছিল জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে। এই কপিলমুনিতে মুক্তিযোদ্ধারা দেড় শতাধিক রাজাকারকে জনতার রায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বরে এ রায় কার্যকর করা হয়।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ কামরুজ্জামান টুকু, গাজী রহমাতুল্লাহ দাদু, স ম বাবর আলী, ইউনুস আলী ইনু, শেখ আব্দুল কাইয়ূমসহ বেশ কয়েকজন কমান্ডার রাজাকার ঘাঁটি আক্রমনের লক্ষে এক সভায় মিলিত হন। নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এই পরিকল্পনা নেয়া হয়। প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৬ ডিসেম্বর রাত্রিতে কপিলমুনি ক্যাম্প আক্রমন করা হবে। কিন্তু ৬ ডিসেম্বর রবিবার এবং স্থানীয় হাটের দিন থাকায় লোকজনের সাথে পথে দেখা হতে পারে এবং শত্রুর ঘাঁটিতে খবর পৌঁছে গেলে পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে এ শংকায় ৬ ডিসেম্বর অভিযান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৭ ডিসেম্বর কপিলমুনি রাজাকার ঘাঁটি আক্রমন করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা স্ব-স্ব ঘাঁটি থেকে সবাই এক যোগে রওনা হয়। ৭ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এরপর রাজাকার ঘাঁটিতে অবস্থানরত ১৫৫ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকারী রাজাকারদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এ নিয়ে ইউনুচ আলী ইনু, ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান, সাইদুর রহমান কুটু, গাজী রহমাতুল্লাহ দাদু বৈঠকে বসেন। ইতোমধ্যে গ্রামবাসীদের মধ্যে খবর পৌঁছে যায় রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করেছে। গ্রামবাসী ক্যাম্পে ছুটে আসে। তারা রাজাকারদের মৃত্যুদন্ড চান।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ আলী ইনু বলেন, জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আমরা ফেলতে পারিনি। রাজাকাররা ওই এলাকায় কি পরিমাণ যে অত্যাচার নির্যাতন করেছে তা তাদের ক্ষোভ চিৎকার ধিক্কারের মধ্যেই অনুমান করা যায়। তারা চিৎকার করে বলতে থাকে ওদের বাঁচিয়ে রাখবেন না। ওদের বাঁচিয়ে রাখলে আমাদের গুলি করে মেরে ফেলুন। ক্ষুব্ধ জনগণের সামনে শেখ কামরুজ্জামান টুকু রায় জানতে চান। এ সময়ে জনগণ চেচিয়ে ওঠে বলে, তাদের ক্ষমা নেই আমরা ওদের মৃত্যুদন্ড চাই। গণআদালতের রায়ে সেখানে দেড় শত’র মত রাজাকারকে গুলি করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। তিনি বলেন, বাংলার ইতিহাসে গণআদালতের রায়ে এটাই প্রথম মৃত্যুদÐ কার্যকরের ঘটনা। কপিলমুনির যুদ্ধই ছিল সবচেয়ে বড় যুদ্ধ খুলনার।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বেই কপিলমুনিতে আরেক ইতিহাস সৃষ্টি হয়। কপিলমুনির এই যুদ্ধে গাজী আনছার আলী ও শেখ আনোয়ার হোসেন শহীদ হন। আহত হন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের মধ্যে খান মোহাম্মদ আলী, তোরাব আলী সানা, আঃ খালেক, আবু জাফর ও বড় খোকা অন্যতম।
এই ঘটনা সম্পর্কে আলাপকালে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক লেখক সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন কপিলমুনির এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমন করে। বিভিন্ন অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেন আঃ সালাম মোড়ল, স,ম আলাউদ্দীন, স ম বাবর আলী, শেখ আব্দুল কাইয়ুম, নৌ কমান্ডার বজলুর রহমান, লেঃ আরেফিন প্রমুখ। ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন শেখ ইউনুচ আলী ইনু। মুক্তিযোদ্ধারা একটানা দু’দিন দু’রাত প্রন্ড গুলি বিনিময়ের পর তৃতীয় দিনে প্রতিপক্ষ রাজাকারদের পক্ষ থেকে গুলির আওয়াজ কমতে থাকে।যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মুক্তিযোদ্ধারা মাইকে রাজাকারদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। প্রতুত্তরে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই আত্মসমর্পণ করতে বলে। একপর্যায়ে রাজাকাররাই তৃতীয় দিনে ৯ ডিসেম্বর সকালে ক্যাম্পের দোতলায় একটি সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। বিভিন্ন দিকের আক্রমনের নেতৃত্বে ছিলেন কপোতাক্ষ নদের অপরপ্রান্তে তৌফিক, বড় খোকা জাফরসহ অন্যরা আর সি চালায়। আরশনগর এলাকায় ঘাঁটি করেন ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান। উদ্দেশ্য খুলনা থেকে হানাদার পাক বাহিনী খুলনা থেকে যাতে আসতে না পারে। কপিলমুনি বালিকা বিদ্যালয়ে অবস্থান নেন স ম বাবর আলীর নেতৃত্বে একটি দল। রাজাকার ঘাঁটির সন্নিকটে অবস্থান নেন মোড়ল মোঃ আব্দুস সালাম ও তার সহযোদ্ধারা। চারিদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত রাজাকার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করকে কপিলমুনিবাসীএফএম নিউজ…
আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী…
বিজ্ঞাপন ও বার্তা বিভাগঃ 0183 11-06 108