পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন; মন্নুজানের বৈঠক মানেনি শ্রমিকেরা

0
363

প্রতিবেদকঃ শেখ হেদায়েতুল্লাহ, খুলনা

মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন বেতন কাঠামোতে বেতন ও মজুরী পাচ্ছে আমরা কেন পাব না। তারা যে বাজার, যে দোকান থেকে পণ্য কেনে আমরাও সেই দোকান থেকে কেনাকাটা করি। তাদের ছেলেমেয়েরা মাছ মাংশ খায় আমাদের ছেলে মেয়েদের খাওয়াতে পারি না। একই মিলে কাজ করে বৈষম্যমূলক বেতন মজুরী মেনে নেয়া হবে না। আমাদেরকেও ২০১৫ সালে ঘোষিত বেতন ও মজুরী দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। এমনটাই বলছিলেন দিঘলিয়ার স্টার জুটমিলের শ্রমিক মো: ইকবাল হোসেন। এই মিলের ৩ হাজার শ্রমিক খালিশপুরের বিআইডিসি রোডের উপর তাবু বিছিয়ে অনশন কর্মসূচিতে শরীক হয়েছেন। গত তিনদিনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনকারী শ্রমিকেরা ইতোমধ্যে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। অর্ধ সহস্রাধিক শ্রমিকের শরীরে স্যালাইন চলছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন।
একই মিলের শ্রমিক কাজী সৈয়দ আলি বলেন, গত তিনদিনে না খেযে প্রসাব- পায়খানা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শরীরে স্যালাইন চলার কারণে মাঝে মাঝে প্রসাবের বেগ হচ্ছে। যে যেখানে পারছে সে সেখানে প্রসাব- পায়খানার কাজটি সেরে নিচ্ছে। পৌষের এই শীতের রাতে কুয়াশায় ও পীচের ঠান্ডায় সর্দি- কাশি দেখা দিচ্ছে। টাকার অভাবে ঔষধ কিনতে পারছি না। তারপরও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যাব না।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে খালিশপুর শিল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপর তাবু টাঙ্গিয়ে শ্রমিকরা কেই শুয়ে কেউ বসে রয়েছেন। চলছে বতৃতা পর্ব। কেউ কেউ দু:খের গান গেয়ে সময় কাটাচ্ছে। তাবুর খুটিতে টানিয়ে দেয়া হয়েছে সুতলি। সেই সুতলীতে টানিয়ে কাউকে কাউকে দেয়া হচ্ছে স্যালাইন। অবস্থা দেখে মনে হয় অর্ধ সহস্রাধিক শ্রমিকের শরীরে স্যালাইন চলছে। এরই মধ্যে দুই শ্রমিক অচেতন হয়ে পড়েন। অন্য শ্রমিকেরা তাকে হাতে হাতে ধরে ইজিবাইকে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। বুধবার থেকে অনশনরত শ্রমিকেরা অসুস্থ্য হয়ে পড়তে শুরু করেন। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১ শ্রমিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সে সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
খালিশপুর বিআইডিসি রোডে প্লাটিনাম, স্টার, দৌলতপুর ও খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকরা অনশন পালন করছে। ক্রিসেন্ট, আলিম, ইর্স্টান, জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের গেটে স্ব স্ব মিলের শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
শ্রমিক নেতারা জানান, আগামী ১৫ ডিসেম্বর বেলা ১১ টায় পাট মন্ত্রণালয়ে আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে পাটমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য বুধবার রাতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনার কর্মসূচি স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানেনি। এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়সহ ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে তারা এ অনশন কর্মসূচি পালন করছে।
শ্রমিক নেতা মো: মুরাদ হোসেন জানান বুধবার রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বাসায় শ্রমিক নেতাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রতিমন্ত্রী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করার প্রস্তাব দেন। ১৫ তারিখ ঢাকার মিটিংয়ে শ্রমিকদের দাবি পূরণ হবে। কিন্তু শ্রমিকেরা মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবে বলে জানান।
উল্লেখ্য, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। গত ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি শুরু হয়।এদিকে অনশন কর্মসূচির কারণে পাটকলগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এফএম নিউজ…

আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী…

বিজ্ঞাপন ও বার্তা বিভাগঃ 0183 11-06 108