প্রতিবেদকঃ শেখ হেদায়েতুল্লাহ, খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা মহানগরীর শান্তিধামের মোড়ে খানজাহান আলী সড়ক পার হয়ে ছেলেকে নিয়ে সামসুর রহমান সড়কে যাবেন জোবাইয়া নওশীন। পা বাড়নোর পরই দুর থেকে মোটর চালিত একটি রিক্সা তাকে ধাক্কা দিলে পড়ে যান তিনি। শিশু ছেলেটি চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। আশপাশের লোকজন নওশীনকে টেনে তোলেন। দোলখোলা মোড়ের ইসলামপুর সড়কের কাজী ফারুকের বাড়ীর পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন মাহবুব হোসেন । হাতে বাজারের ব্যাগ। হঠাৎ পিছন দিক দিয়ে একটি মোটরচালিত রিক্সা তাকে ধাক্কা দিলে পড়ে যান পাশের ড্রেণে। নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে লোয়ার যশোর রোডের বাটা সু’এর শো রুমের সামনে যানজটে আটকে পড়েন মোটর সাইকেল চালক মোঃ রফিকুল ইসলাম। হঠাৎ থমকে যাওয়া যানবাহন চলতে শুরু করে। রফিকুল ইসলামের পাশে দাড়ানো মোটরচালিত রিক্সাটি তার ডান পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। তিনি আঘাত পেয়ে পাশে গিয়ে দাড়িয়ে পড়েন। পাশের বেকারী থেকে তার পায়ে দেয়া হয় বরফ।
এই তিনটি ঘটনা নগরীতে ধেয়ে চলা মোটরচালিত রিক্সায় দুর্ঘটনার। প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। অথচ শতভাগ অবৈধ যান মোটর চালিত রিক্সা বন্ধের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেটিতে ভাটা পড়েছে। খুলনা মহানরীকে পরিচ্ছন্ন ও যানজট মুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটি সরকার দলীয় শ্রমিক সংগঠণের কতিপয় নেতার কারণে বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। যদিও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বর্তমানে ইজিবাইকের রেজিস্ট্রেশন দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান। এটি শেষ হলেই নগরীতে চলাচলকারী সকল রিক্সা চালক ও মালিকদের ডাকা হবে। পরিদর্শন করা হবে রিক্সা। মোটর ব্যতিত যে সকল রিক্সা রয়েছে তাদের রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করা হবে।
সাধারণ যাত্রীদের মরণঘাতী হয়ে দাড়িয়েছে মোটর চালিত এই রিক্সা। ভাড়া কম হলেও বেশিরভাগ যাত্রীদের বক্তব্য এমন যে, এসব রিক্সা চালকরা রিক্সা চালায় বেপরোয়া গতিতে। কেউ চালায় রিক্সার রডের উপর পা তুলে; কেউ চালায় এক পায়ে। আবার কেউ চালায় সীটের উপর একপেশে বসে। যেখানে সেখানে করা হয় পার্কিং। কাঠামোগত দিক থেকে যানবাহনটি হালকা হওয়ায় হঠাৎ ব্রেক কষলে উল্টে যায়। প্রতিদিন এই যানে চড়ে নগরীতে অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেকে।
জানা যায়, নগরীর অযান্ত্রিক যানবাহনের অনুমোদন দেয় খুলনা সিটি করপোরেশন। যান্ত্রিক যানবাহনের কোনো অনুমোদন সিটি করপোরেশন দেয় না। কিন্তু মোটরচালিত রিকশা প্রস্তুত ও আমদানিকারকরা অযান্ত্রিক রিকশার লাইসেন্স ব্যবহার করছে । এসব রিকশার ঘন্টায় গতিবেগ ২০-২৫ কিলোমিটার। এই রিকশা তৈরিতে খরচ পড়ছে ৪৫ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। যাদের সাধারন রিক্সার লাইসেন্স রয়েছে তারা মোটরচালিত রিক্সা তৈরি করে ওই লাইসেন্স নম্বর লাগিয়ে চালাচ্ছেন।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের হিসেব অনুযায়ী নগরীতে ১৭ হাজার রিক্সার লাইসেন্স দেয়া আছে। তার মধ্যে গত অর্থ বছরে মাত্র ৬ হাজার রিক্সার লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে। তাদের হিসেব মতে নগরীতে রিক্সার সংখ্যা কমপক্ষে ৩০ হাজার।
নিরাপদ সড়ক চাই-এর নেতা ডাঃ সুমাইয়া ইয়াসমিন নীলা বলেন বর্তমানে মোটর চালিত রিকশার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। কিন্তু এসব পরিবহনের কোনো অনুমোদন নেই। আর দেখারও যেন কেউ নেই। ফলে নিয়ন্ত্রনহীনভাবে চলছে এই মরনযান।বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ্জামান এ বিষয়ে বলেন নগরীতে মোটর চালিত রিক্সার কোনো অনুমোদন নেই। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নগর জীবনে এই যানবাহনটি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র আলী আকবার টিপু এ বিষয়ে বলেন মোটরচালিত রিক্সার অনুমোদন সিটি করপোরেশন দিতে পারে না। সেহেতু যারা অযান্ত্রিক রিক্সার লাইসেন্স যান্ত্রিক রিক্সার ব্যবহার করছে তা অবৈধ। গত বছর অক্টোবর মাস থেকে বেআইনী এসকল রিক্সা চলাচল বন্ধের জন্য সিটি কর্পোরেশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল রিক্সা চালক ও মালিকদের ডাকা হবে। নগরীতে চলাচলকারী সকল রিক্সা একস্থানে জড়ো করে পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত ্উপ- পুলিশ কমিশনার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো: কামরুল ইসলাম জানান, নগরীর অলিগলিতে মোটর চালিত রিক্সা চলাচল করছে এমন অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্রাফিক বিভাগের একার পক্ষে বেআইনী এই যান বন্ধ করা সম্ভব নয়।এফএম নিউজ…
আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী…
বিজ্ঞাপন ও বার্তা বিভাগঃ 018-311 06 108