প্রতিবেদকঃ শেখ হেদায়েতুল্লাহ, খুলনা প্রতিনিধি
ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। এতে ভাটার আশপাশের এলাকা, নদী, শহরাঞ্চল ও গ্রামীণ জনপদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইটভাটাগুলোতে ব্যবহার নিষিদ্ধ জ্বালানি কাঠও পোড়ানো হচ্ছে। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনে (২০১৩) নিষেধ থাকা সত্তে¡ও বেশির ভাগ ভাটাই স্থাপন করা হয়েছে লোকালয়ে। গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দরের অতি সন্নিকটে, কৃষি জমিতে, নদীর তীরে। ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে আবাদি জমির উপরিভাগ, নদীর তীরে পুকুর করে পলি জমিয়ে সেই মাটি দিয়ে। যা আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কাঠ ও অত্যন্ত নিম্নমানের কয়লা পোড়ানো হচ্ছে। এতে ইটভাটাগুলোতে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া। সে ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে চার পাশে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
তাছাড়া কৃষি জমির উপরিভাগ চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে ফসল ইৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। ইঁটভাটার চিমনি থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়ে তা গাছ-পালা ও কৃষি পণ্যে পড়ায় কৃষি পন্য উৎপাদন হ্রাস পায়। ইটভাটা থেকে নির্গত ওই কালো ধোঁয়ায় গাছের পাতায় এক ধরণের বাদামী আবরণ তৈরি হয়। যা টক্সিন নামে এক প্রকারের বিষাক্ত উপাদান তৈরি করে। সেটা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে মাটির সাথে মিশে যায় এবং উৎপাদিত কৃষি পন্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাড়ায়।
২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। অথচ ওই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে খুলনা শহরের আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অর্ধশত ইটভাটা। এর মধ্যে রূপসা, ভৈরব ও আঠারোবেকি নদীর পাড়ে অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ভাটার কালো ধোঁয়ায় ওই এলাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ সংসদে পাস করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই তারিখের গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আইনটি ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করে। এই আইনের আওতায় জ্বালানি সাশ্রয়ী, উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন জিগজ্যাগ কিলন, ভার্টিক্যাল স্যাফট ব্রিক কিলন, হাইব্রিড হফম্যান কিলন, টানেল কিলন বা অনুরূপ কোনো ভাটা স্থাপন/পরিচালনা করা যাবে বলা হয়েছে। এব্যতিত অন্য কোন প্রকারের ইটভাটা স্থাপন করা বেআইনী।
পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না এমন অভিযোগ পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনার সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, খুলনায় ২ শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে এসব ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীর যোগসাজশে এসব অবৈধ ইটভাটা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ইটভাটায় নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তিনি বলেন পত্র-পত্রিকায় এসব নিয়ে লেখালেখি হলে কিছুদিন তৎপর থাকে। তারপর আবারও একই অবস্থায় ফিরে আসে।
জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ইটভাটার সংখ্যা ১২১টি। এরমধ্যে ২/৩টি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া আরও কিছু ভাটা রয়েছে যাদের পরিবেশগত ছাড়পত্রসহ আইন অনুয়ায়ি কাগজপত্র না থাকায় তাদের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না।
খুলনা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাছাড়া কৃষিজ পন্য উৎপাদনও ব্যহত হয়। তিনি বলেন, কৃষি জমির টপ সয়েল (উপরিঅংশ) ইঁভাটাতে চলে যাচ্ছে। এতে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, নদী, দখল করে ও কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করার কোন বৈধতা নেই। বেআইনী এ সকল ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে।এফএম নিউজ…
আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী…
বিজ্ঞাপন ও বার্তা বিভাগঃ 018-311 06 108