প্রতিবেদকঃ শেখ হেদায়েতুল্লাহ, খুলনা প্রতিনিধি
রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকলগুলোর শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে গত ৪ জানুয়ারি থেকে। নতুন মজুরী কমিশন অনুয়ায়ি এক সপ্তাহের স্লিপও পেয়েছেন। আরও একটি সপ্তাহ শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। খুলনায় রাষ্ট্রীয় পাটকল ৭টি। এরমধ্যে দুটি পাটকল পরিচালিত হয় নো ওযার্ক নো পে ভিত্তিতে। মিলগুলোতে বাড়ছে দেনা। অর্থ পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। পাট সঙ্কটের কারণে মিলগুলো উৎপাদন সচল রাখতে উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ থেকে ৪০ ভাগ উৎপাদন করছে। অবিক্রিত পণ্যের স্তুপও বাড়ছে।
বিজেএমসি (বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন)’র মালিকানার ২৬টি পাটকলের মধ্যে খুলনার ৭টি পাটকল হচ্ছে ক্রিসেন্ট জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস, স্টার জুট মিলস, ইস্টার্ন জুট মিল, আলিম জুট মিলস, খালিশপুর জুট মিলস ও দৌলতপুর জুট মিলস। এর মধ্যে খালিশপুর জুট মিল ও দৌলতপুর জুট মিল দুটি নো ওয়ার্ক নো পে ভিত্তিতে চলে। এসকল জুট মিলে স্থায়ী শ্রমিক প্রায় ১০ হাজার। বদলী শ্রমিকদের বর্তমানে কাজ নেই। বদলী শ্রমিক রয়েছে আরও প্রায় ৬ হাজার।
বর্তমানে মিলগুলোর শ্রমিকদের ৮ সপ্তাহের বকেয়া মজুরী বাবদ পাওনা রয়েছে ৭৭ কোটি টাকা। মিলের পাট ব্যবসায়ীদের নিকট দেনা রয়েছে প্রায় ১৪৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি মিলগুলোর অবিক্রিত বিভিন্ন প্রকারের পাটপন্য রয়েছে প্রায় ১৮৯ কোটি টাকা।
প্লাটিনাম জুবিলী জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মো: গোলাম রব্বানী জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে ১৫/২০দিন চলতে পারে। শ্রমিকদের মজুরী বাবদ পাওনা রয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। অবিক্রিত পাট পণ্য রয়েছে ৪৫ কোটি টাকার। মিলের স্থায়ী শ্রমিক প্রায় ৩ হাজার।
স্টার জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মো: রইচ উদ্দীন আহমেদ জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে ১দিন চলতে পারে। তারপর আবার কিনতে হবে। পন্য যা বিক্রি হচ্ছে সেই টাকা দিয়ে পাট কিনে মিলের উৎপাদন সচল রাখতে হচ্ছে। তিনি বলেন মিলের শ্রমিকদের মজুরী বাবদ পাওনা রয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ২৫ কোটি টাকা। অবিক্রিত পাট পণ্য রয়েছে ৮ কোটি টাকার মত।
ক্রিসেন্ট জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মো: নজরুল ইসলাম খান জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে মাস দুয়েক চলতে পারে। মিলের উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পন্য উৎপাদন করে উৎপাদন সচল রাখতে হচ্ছে। মিলের কাছে শ্রমিকদের মজুরী বাবদ পাওনা রয়েছে ৭ কোটি টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। অবিক্রিত পাট পণ্য রয়েছে ৫র কোটি টাকা প্রায়। এই মিলে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছে ২ হাজার ৯০০’র মত। বদলী শ্রমিক ৭০০’র মত।
ইস্টার্ন জুটমিলের প্রকল্প প্রধান ড. জুলফিকার জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে ৪৬ দিনের মত চলতে পারে। মিলের কাছে শ্রমিকদের মজুরী বাবদ পাওনা রয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতন বাবদ পাওনা রয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ১৫ কোটি টাকা। অবিক্রিত পাট পণ্য রয়েছে ১৫ কোটি টাকার।
আলিম জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মো: সাজ্জাদ হোসেন জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে ৫৩ দিন চলতে পারে। তিনি জানান মিলের কাছে শ্রমিকদের মজুরী বাবদ পাওনা রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ৬ কোটি টাকা। অবিক্রিত পাট পণ্য রয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার মত।
দৌলতপুর জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মো: মুরাদ হোসেন জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে ৪ মাস চলতে পারে। শ্রমিকদের মজুরী বাবদ পাওনা রয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ৩ কোটি টাকা। অবিক্রিত পাট পণ্য রয়েছে ৬ কোটি টাকার। মিলের শ্রমিক সংখ্যা সাড়ে ৩ শ।
খালিশপুর জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মো: খলিলুর রহমান জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে আগামী ৫ মাস চালিয়ে নেয়া সম্ভব। এই শ্রমিকদের মজুরী বাবদ পাওনা রয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ২১ কোটি টাকা। অবিক্রিত পাট পণ্য রয়েছে ৫৫ কোটি টাকার মত।
বিজেএমসি (বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন)’র আঞ্চলিক লিয়াজো অফিসার মো: বনিজ উদ্দীন মিয়া জানান, শ্রমিকদের নতুন মজুরী কমিশন অনুযায়ী গত সপ্তাহে পে- স্লিপ দেয়া হয়েছে। আরও একটি সপ্তাহ শেষ হতে চলেছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অর্থ পেলে সংশ্লিষ্ট মিলগুলোতে পৌছে যাবে। পরে শ্রমিকরা নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবে।এফএম নিউজ…
আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী…
বিজ্ঞাপন ও বার্তা বিভাগঃ 018-311 06 108