পাপিয়ার মূল টার্গেট ছিল প্রভাবশালী ধর্নাঢ্য ব্যক্তিঃ সঙ্গীদের নাম প্রকাশ

0
393

প্রতিবেদকঃ শমীমা আফরোজ, অনিয়ম ও অপরাধ বিভাগ

শামীমা নূর ওরফে পাপিয়ার মূল টার্গেট ছিল প্রভাবশালী ধর্নাঢ্য ব্যক্তিবর্গ। যেই প্লান সেই মোতাবেক কাজ করে চলেছিলেন তিনি। বহুল সময় ধরে অনেক সুন্দরী মেয়েদেরকে নিয়ে তার ব্যবসা-বাণিজ্য কার্য পরিচালনা করেছেন তিনি। কাজ ছিল এই সমস্ত ব্যক্তিবর্গকে বিভিন্ন ধরনের কাজে ফাঁসিয়ে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাবে ধন সম্পদ লুটে নেওয়া।

পাপিয়া প্রথমে বিভিন্ন এলাকার সুন্দরী মেয়েদেরকে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তারপরে সমস্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গকে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই সকল সুন্দরী মেয়েদের সাথে সময় কাটানোর জন্য প্রস্তাব জানান। সকলে পাপিয়ার ফাঁদে পা দিয়ে পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে এই সমস্ত মেয়েদের সাথে সময় কাটায়। সেই সমস্ত সময়ের অশ্লীল ভিডিও নিয়ে পাপিয়ার ব্যবসার এক বিপুল রাজ্য তৈরি হয়। বিভিন্ন সময়ে পাপিয়া এসমস্ত ব্যক্তিবর্গের ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে কখনও ফ্ল্যাট কখনও প্রচুর পরিমাণে টাকা-পয়সা তাদের কাছ থেকে লুটে নেয়। গড়ে তোলে অবৈধ কাজের এক মহারাজ্য।

এই সমস্ত কাজের সাথে তার সাথে সংযুক্ত তার স্বামী মোস্তাফিজুর। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির কাছ থেকে জানা যায় এই কাজের সাথে আরও শতাধিক নারী নেত্রী যুক্ত আছেন। এছাড়াও যুক্ত আছেন বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। তদন্ত কমিটির কাছ থেকে আরো জানা যায়, তাদের প্রতারণার শিকার অনেক ভুক্তোভোগী এখন মুখ খুলছেন পুলিশের কাছে।

এদিকে পাপিয়ার অপকর্মের সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেজন্য এমপিসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়াও অন্তত শতাধিক নারী নেত্রীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা এই সব নারী নেত্রীর বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান চলছে। এমনকি তারা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া যাদের নাম প্রকাশ করেছেন এরই মধ্যে তাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া পাপিয়ার মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তিনি সরকার দলের প্রভাবশালী নেতানেত্রীদের সঙ্গে দিনের পর দিন কথা বলেছেন।

এদিকে পাপিয়া-মফিজুর দম্পতির প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ও অনৈতিক কাজে বাধ্য হওয়া মেয়েরা মুখ খুলতে শুরু করেছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর পাপিয়া দম্পতির প্রতারণার শিকার মেয়েরা পাপিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এরইমধ্যে বিমানবন্দর থানায় পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী। তপন তালুকদার টুকু নামে ওই ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচ মাস আগে আমি ঢাকা থেকে নরসিংদীতে এক অনুষ্ঠানে বন্ধুর বাড়িতে যাই। সেখানে পাপিয়ার সঙ্গে দেখা হয়। অনুষ্ঠান শেষে পাপিয়া আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে কম বয়সী ৪ জন সুন্দরী তরুণীকে তারা আমার সামনে নিয়ে আসে। এরপর জোর করে তাদের সঙ্গে আমার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে। তিনি আরো বলেন, এরপর আমি চলে আসতে চাইলে পাপিয়ার স্বামী মফিজুর বলেন, এখন তো যাওয়া যাবে না। আপনি তো আমার মেয়েদের সঙ্গে খারাপ কাজ করেছেন। এখন তারা আপনার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করবে। এ কথা বলে তারা কোন পুলিশকে যেন ফোন দিলেন। আসলে তারা পুলিশ ছিলো না, তাদেরই সাজানো কোনো ব্যক্তি ছিলো। ফোনের ওপাশ থেকে বলা হলো, আমি আসতেছি। তবে পুলিশের কেউ আসেননি।

টুকু বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামী আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, এখান থেকে পার পেতে হলে, আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। নইলে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেবো। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবো। আপনার নামে মানবপাচারের মামলা দেওয়া হবে। পরে আমাকে মারধর করে তারা। মান-সম্মানের ভয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পরও তাতে মন গলেনি। এরপর আমাকে বাড়ির ছাদে তিনদিন আটকে রাখে। একপর্যায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার পর তারা আামকে ছেড়ে দেয়।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি রোববার গোপনে দেশত্যাগের সময় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সেক্রেটারি শামিমা নূর পাপিয়াকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিনসহযোগীসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেন- পাপিয়ার স্বামী ও তার অবৈধ আয়ের হিসাবরক্ষক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকালী শেখ তায়্যিবা ও সাব্বির খন্দকার।

এই নেত্রীর প্রকাশ্য আয়ের উৎস গাড়ি বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা। তবে এর আড়ালে জাল মুদ্রা সরবরাহ, বিদেশে অর্থপাচার এবং অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার পরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার অন্ধকার জগতের চাঞ্চল্যকর কাহিনী। এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেটের ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডের রওশনস ডমিনো রিলিভো নামের বিলাসবহুল ভবনে তাদের দু’টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা, আগ্নেয়াস্ত্র, বিদেশী মদসহ অনেক অবৈধ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। পরে দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি জাল টাকা উদ্ধার, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক তিন মামলায় পাপিয়ার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তার স্বামী মফিজুর রহমানেরও ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

এফএম নিউজ…

আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী…

বিজ্ঞাপন ও বার্তা বিভাগঃ 018-311 06 108