প্রতিবেদকঃ রোদেলা হক ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিভাগ
করোনা ৩৮০ বার জিনের গঠন বদলেছে, মানুষের শরীরে খুঁজে পেয়েছে বন্ধু জিন, কোভিড রহস্য জানালেন বাঙালি বিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়। চৈতালী চক্রবর্তী বলেন, ২০০২-০৩ সালে বিশ্বে মহামারী হয়ে এসেছিল ‘সার্স’ (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) । তার থেকেও ভয়ঙ্কর ছিল মিডল ইস্ট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম (MERS)। প্রাণঘাতী হয়েছিল ২০১২ সালে। এর মাঝে একাধিকবার আসা যাওয়া করেছে বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু-এর মতো সংক্রমণ। তবে বিশ্বজোড়া মহামারী বা প্যানডেমিক (Pandemic) পর্যায়ে গিয়ে হাজারে হাজারে মৃত্যু ঘটাতে দেখা যায়নি কোনও ভাইরাসকে। কুড়িতে এসে বাঁধনছাড়া হয়ে গেছে এই মারণ ভাইরাস। যার গঠন অজানা, হাবভাব সার্সের মতো, চরিত্রে আক্রমণাত্মক, পরিণতি অঙ্গ বিকল থেকে মৃত্যু। বিশ্বের বিজ্ঞানী ও গবেষকমহলে এই ভাইরাসের নামই হয়েছে নোভেল করোনাভাইরাস (Novel Coronavirus-2019 ncov)। করোনাভাইরাস বা Cov কিন্তু নতুন নয়, এর অস্তিত্ব ছিলই। শুধু বদলে গেছে এর জিনের গঠন। ক্ষুদ্র শরীরে একের পর এক রাসায়নিক বদল ঘটিয়ে সে এখন অপ্রতিরোধ্য। কেন চরিত্র বদলাচ্ছে করোনাভাইরাস? তার কারণ অনেক।
মোহালির ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (আইআইএসইআর)-এর ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক-বিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, যে কোনও সাধারণ ভাইরাস ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে যদি তার ভিতরে একাধিক মিউটেশন (Genetic Mutation) হয়। অর্থাৎ বদলে যায় জিনের গঠন। সাধারণ ফ্লু-এর ভাইরাসও তখন হযে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। তেমনই কিছু ঘটে চলেছে করোনাভাইরাসের সঙ্গেও। এতবার সে নিজেকে বদলে ফেলছে যে এখন থেমে যাওয়ার ক্ষমতা তার নিজেরও নেই। এমনকি এই ‘মডিফায়েড’ ভাইরাসকে রোখার দাওয়াইও গবেষকদের অজানা। কারণ যে ওষুধ বা ভ্যাকসিনই দেওয়া হোক না কেন, ভাইরাস তার ধরন বদলে ফেললে সেই ভ্যাকসিন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। প্যানডেমিক তো বটেই, একে রোখা না গেলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও মারাত্মক হয়ে আছড়ে পড়তে পারে দেশে দেশে। নোভেল করোনাভাইরাসের জিনোম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর মধ্যেকার ২৭টি ভাইরাল প্রোটিনের রাসায়নিক বদল হয়েছে। ৩৮০ বার মিউটেশন অর্থাৎ জিনের গঠন বদলে গেছে। মাত্র ১৫০ ন্যানোমিটার যে ভাইরাসের আয়তন তার মধ্যে যদি ২৭টি প্রোটিনে ৩৮০ বার মিউটেশন হয়, তাহলে সেই ভাইরাস কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। সাধারণ ফ্লু যখন মহামারী হয় তার মধ্যে এক আধটা ভাইরাল প্রোটিনের বদল ঘটে, যাকে বলে ‘পয়েন্ট মিউটেশন’ (Point Mutation) । অর্থাৎ এক বা সিঙ্গল অ্যামাইনো অ্যাসিডের বদল। কিন্তু করোনার মধ্যে সেই পরিবর্তন লাগামছাড়া। এত বেশিবার মিউটেশনের ফলে করোনাভাইরাসের প্রকৃত চরিত্র ও রাসায়নিক গঠন বিজ্ঞানীদের কাছে অধরাই থেকে যাচ্ছে। এই ভাইরাসকে নির্মূল করার দাওয়াই তাই এখনও বার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
এফএম নিউজ…
আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী…
বিজ্ঞাপন ও বার্তা বিভাগঃ 018-311 06 108