চা, কফি বা গরম পানি খেলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়া যায়! আসলেই কী?

0
373

প্রতিবেদকঃ সানজিতা আক্তার সাথী

স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগ

গরম পানীয় হয়তো কিছুটা স্বস্তি বা আরামবোধ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে ঠান্ডার দিনে। হয়তো বিক্ষিপ্ত মানুষকে কিছুটা ঠান্ডা করতে পারে। কিন্তু করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর মতো কঠিন সময়ে কি এটি কোন সহায়তা করতে পারে? সামাজিক মাধ্যমগুলোয় এখন এ ধরনের অনেক পরামর্শ ঘুরে বেড়াচ্ছে।

একটি বার্তায় দাবি করা হয়, গরম পানি পান করলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে। এই বার্তাটি এতই ছড়িয়ে পড়ে যে, ইউনিসেফ এ বিষয়ে একটি বিবৃতি জারি করতে বাধ্য হয়। তারা বলেন, এরকম কোন ঘোষণাই তারা দেননি। যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ রন একেলিস বলেছেন,”গরম পানি ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে, এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। “ঠান্ডা এবং ফ্লুতে ভোগার সময় গরম পানি খেলে কি হতে পারে এ নিয়ে অতীতে গবেষণা করেছিলেন একেলিস। তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, ঠান্ডা লাগলে গরম পানিয় হয়তোবা খানিকটা স্বস্তি দিতে পারে। এর কারণ গরম পানিয় হয়তোবা মুখ ও নাকের লালা এবং শ্লেষ্মার নিঃসরণ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা প্রদাহ কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তিনি এই সিদ্ধান্তেও পৌঁছেছিলেন যে, এরমধ্যে হয়তোবা রোগের গ্রহণকৃত কিছু ঔষধের কারণে মানসিক প্রভাবও পড়তে পারে।

সারস-কোভ-২, যে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগের জন্ম দিয়েছে, সেটির ক্ষেত্রে বিবিসি ফিউচার দেখতে পেয়েছে যে, নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের বিপক্ষে কোন ধরনের প্রতিরক্ষাই দিতে পারে না এই খাবার পানি। পানি খেলে বা গার্গল করলেও এ ভাইরাস ধুয়ে যায় না। অন্য ব্যক্তিদের কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ক্ষুদ্র আকারে একটি নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করার পর মানুষকে সংক্রমিত করতে শুরু করে। প্রথমত এটি মানুষের শরীরে ফুসফুসের কোষগুলোকে আক্রমণ করে।সেখানকার কোষগুলো এমন একটি এনজাইম ব্যবহার করে, যা ব্যবহার করে ভাইরাস ফুসফুসের ভিতরে প্রবেশ করে। শ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে এসব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফোটা ফুসফুসের গভীরে পৌঁছে যায়-যেখানে মুখ থেকে যাওয়া যে কোনো তরল পৌঁছানো সম্ভব।

প্রথমদিকে কিছু গবেষণায় বলা হয়, প্রথম কোষে সংক্রমিত হওয়ার পর অন্য কোষে সংক্রমিত হতে ভাইরাসের ৩০ ঘন্টা সময় লাগে। একইভাবে আমাদের শরীরের কোষে প্রবেশ করার পর বাইরের যে কোনো রকম তাপমাত্রা থেকে ভাইরাসটি নিজেকে রক্ষা করতে পারে। মানব শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৮.৬ডিগ্রী ফারেনহাইট), যা ভাইরাসের প্রতিলিপি বা বিস্তারের জন্য আদর্শ। ফলে গলার মধ্যে গরম পানির গড়গড়া করে কোষের ভেতরে থাকা ভাইরাস হত্যা করা যায় না। এজন্য ৫৬ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অথবা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা দরকার, যা সারসের মতো করোনাভাইরাস হত্যা করতে পারে। ভাইরাস হত্যা করতে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় রান্না করা যেতে পারে, কিন্তু এ ধরনের তাপে মানব ত্বক পুড়ে যাবে এবং ক্ষত সৃষ্টি হবে।

অনেকে ভুয়া পরামর্শ দেন যে, গরম পানি দিয়ে গোসল করা উচিত। এত গরমে গরম পানিতে নেমে থাকা সম্ভব নয়। কেউ যদি পারেও তবে তা তার শরীর থেকে সম্পূর্ণ ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে না। এর কারণ হল আপনি বাইরে যত তাপমাত্রাই থাকুন না কেন, আপনার শরীর ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ফলে ভাইরাস হত্যা করতে গিয়ে বাইরে তাপমাত্রা বাড়িয়ে আপনি হয়তো আপনার শরীর পুড়িয়ে ফেলবেন এবং শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলবেন। আপনার শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়া মানে আপনার হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। আর এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা হলে এবং দ্রুত চিকিৎসা নিতে না পারলে মৃত্যুও হতে পারে।

অনেকগুলো পরামর্শে দাবি করা হয় যে, চায়ের সঙ্গে অন্যান্য অনেক উপাদান মিশ্রিত করে খেলে সেটি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু এর সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুতরাং গরম পানিয়ের হয়তোবা অনেক গুণাবলী থাকতে পারে কিন্তু কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে সুরক্ষা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে চলা এবং নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সর্বশেষ নির্দেশাবলী অনুসরণ করা। সূত্রঃ বিবিসি বাংলা

এফএম নিউজ

আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী

বিজ্ঞাপন+বার্তা বিভাগঃ 01831106108