লেখক- সাদেক আহমেদ সৈকত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম।
চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট এর মধ্যে পার্থক্য কি? এক কথায় যদি বলি চিকিৎসক হলো রোগ বিজ্ঞানী ফার্মাসিস্ট হলো ঔষধ বিজ্ঞানী। এখন বাংলাদেশের দিকে তাকাই্। আপনারা কখনো আপনাদের প্রয়োজনে বলেছেন হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট দরকার? রোগীদের আপনারা চিকিৎসা দিবেন এটা আপনাদের দায়িত্ব। আমি জানি আপনারা কত কষ্টো করে আপনাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
চিকিৎসকদের একটু পিছনে নিয়ে যাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থার সিস্টেম যেমন ছিলো তেমনই আছে। শুধু মানুষের পরিবর্তন হয়েছে।
প্রিয় চিকিৎসক আপনি সব কাজ একা করেন। আপনার মন সবসময় ভালো থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরও আপনি চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসি দিচ্ছেন রোগীদের বুঝানোর কাজটা আপনি করছেন। ঔষধ দেয়ার কাজটা আপনি করছেন। এখন আপনি চিন্তা করুন তো সবগুলো কাজ কি আপনার দারা সম্ভব? আপনারা জীবনের রিস্ক নিয়েছেন অনেক বার। ভুল চিকিৎসার নামে রোগীর মৃত্যু তারপর চিকিৎসকের অপদস্থ।
আপনাদের চিকিৎসকদের দেখেছি আবার আন্দোলন করছেন। আপনি কখনো প্রেসার মুক্ত কাজ করতে চেয়েছেন অথবা পেরেছেন? আপনি কখনো ভেবেছেন বিশ্বে কিভাবে হাসপাতালগুলো চলছে? আপনি একটু বাংলাদেশের প্রাইভেট কয়েকটি হাসপাতালের দিকে তাকান সেখানে সবার কাজ ভিন্ন ভিন্ন। চিকিৎসক শুধু চিকিৎসা দিবে। নার্স সেবা দিবে। ফার্মাসিস্ট ঔষধের ডোজ ম্যান্টেইন করবে। এটাতো আপনারা হসপিটাল ফার্মেসি ম্যানেজমেন্টে সাবজেক্টে পড়ার কথা।
আপনারা চিকিৎসকরা চাইলেই সকল ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করতে পারেন। আর কত পুরাতন সিস্টমকে অনুসরণ করবেন। বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন। তখন আমার দেশের একজন চিকিৎসক বলেছিলেন এই দেশেও ভাইরাসটির সংক্রমন ঘটবে। আমি এখন ভাবছি কতখানি মেধাবী ও অভিজ্ঞতা থাকলে এভাবে বলতে পারেন। সেই চিকিৎসককে যদি নন প্রফেশনাল একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পিপিপি দিয়ে চিকিৎসকদের সুরক্ষা করাতে চান, কিভাবে হবে?
যেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী পিপিই বলতে পারেনা সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে আমাদের এই চিকিৎসকরা কতটুকু সুরক্ষিত থাকবে। ভাবতে কষ্টো হয় আপনারা ঢাল বিহীন যোদ্ধা। এই যোদ্ধাদের যখন একটি গ্রুপ কসাই বলে, শুনতে অনেক কষ্ট হয়। কারণ এ গ্রুপটি স্বার্থলোভী অসৎ ব্যক্তির দল। দল ও নিজেদের অসৎ চরিত্র আড়াল করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খারাপভাবে তুলে ধরছে এই চিকিৎসকদের। সে হিসেবে ধমক কমই হয়েছে।
দেশের ৯৯.৯৯% মানুষ জানে আজকের এই পরিস্থিতির জন্য কারা প্রকৃতপক্ষে দায়ী। তিন মাসে একটা পূর্ণাঙ্গ করোনা হাসপাতাল তৈরি করতে না পারা কি চিকিৎসকদের ব্যর্থতা? তারপরও একটা আশা ছিল, যেহেতু নিজেরও মরার ভয় আছে, তাই এই অসৎ লোকগুলো হয়তো গোপনে হলেও মাফ টাফ চেয়ে কিছু কাজ করার চেষ্টা করবে। তা না করে আবারও চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষকে মুখোমুখি করিয়ে দিলো। এর পরিণাম দেশের সবাইকেই ভোগ করতে হবে।
এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিতান্তই সহজ সরল ভাবে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষতি তিনি চিন্তা করতে পারেন না। যখন তিনি শুনেছেন তার সাধারণ জনগনকে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন না, তখন ক্ষিপ্ত হননি এটা চিকিৎসকদের সৌভাগ্য। আমি জানি চিকিৎসকদের যদি বলতো ভয় করোনা আমরা আছি। তাহলে এই কথাগুলো থাকতো না। মানুষের সেবা দায়িত্ববোধ থেকে আসে। চাকরি যাওয়ার ভয় থেকে না। যেখানে জীবনের বিন্দুমাত্র নি:শ্চয়তা নাই সেখানে চাকুরী।
প্রিয় চিকিৎসক,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরুষ্কারের ঘোষনা দিয়েছেন। যতকিছু হোক সাধারণ মানুষের সুখের কথা ভেবে সব করছেন। আমি জানি আপনারা মর্মাহত হয়েছেন। আপনাদের স্থানে আমি থাকলে একি কাজ করতাম। শুধু একটা ভবিষ্যত বানী দিয়ে গেলাম, প্রধানমন্ত্রী আপনাদেরকে বীরের সম্মাননা দিবেন ক্রাইসিস মুহূর্তটা যেতে দিন। ৫২, ৭১, আজ পর্যন্ত কোন আন্দোলন, সংগ্রাম বা জাতীয় দুর্যোগে ডা. মিলন, আলিম চৌধুরীর মতো চিকিৎসকরা কিছু পাওয়ার লোভে দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েনি।
আপনি কখনো ভেবেছেন আপনার রোগীর জন্য যে ঔষধটি আপনার হাতে পাচ্ছেন, সে কে? কি করছে? আমি গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টের কথা বলছি। আপনার সরকারি চাকুরী আছে, গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টের কিন্তু নেই। আপনার পেশার পরিচিতি সবাই জানে। ফার্মাসিস্টের কথা কে জানে? আপনি তো কাজ করেন নিজের এবং পরিবারের সেইফটির জন্য। সরকার আপনাকে সব করে দিবে। ফার্মাসিস্টরা কি পাবে বলতে পারেন? আপনার চাকুরী চলে গেলে চেম্বার করে নিতে পারবেন। কিন্তু ফার্মাসিস্ট কি করবে ভাবতে পারেন?
ফার্মাসিউটিক্যালগুলোর ফ্যাক্টরী এখনো খোলা। গার্মেন্টস গার্মেন্টস করে শেষ হয়ে যাচ্ছি। ফার্মাসিস্টদের জীবন কিভাবে চলবে ভেবেছেন ? তাদের জীবনের সুরক্ষা কতখানি? তাদের ভবিষৎ কি যারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে ১৪১ টা দেশে ঔষধ রপ্তানী করছে। আমার দেশের ফার্মাসিস্টদের বানানো ঔষধ। এখন হয়তো কোনো যুক্তি দিবেন। আমরা ফার্মাসিস্টরা চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতির জন্য বিভিন্ন সময়ে দাবী তুলে আসছি। আপনারা হয়তো ভেবেছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট আসলে আপনার জায়গাটি নিয়ে নিবে। তাই সবসময় চিকিৎসকের দোহাই দিয়ে ডিজিডি এর মহাপরিচালক হসপিটাল ফার্মাসিস্ট স্থগিত করে রাখলেন।
এভাবে এখনই না শুধু সেই ৭১ এর যুদ্ধ পরবর্তি সময় থেকে চলে আসছে। সেই ফার্মাসিস্টরা কাজ করছে অসম্মানিত হয়ে পদে পদে। শুধু একটি উদাহরন দেই আপনি চিকিৎসক; বিয়ের বাজারে সমাজে আপনার কদর অনেক উপরে। আর ফার্মাসিস্ট শুনলে বিয়ে দূরের কথা সমাজে তাকে বানিয়ে দেয়া হয় দোকানদার হিসেবে।
এখন আপনারা তরুন ডিজিটাল চিকিৎসক। আপনাদের সময় হয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার। আপনারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে যেভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন। পৃথিবীর কোনো দেশের চিকিৎসক আমার দেশের চিকিৎসকের সাথে তুলনা হতে পারে না এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। পরিশেষে চীন থেকে আনলে মন্ত্রী আনেন, উপদেষ্টা আনেন। চিকিৎসক , ফার্মাসিস্ট ও নার্স চেষ্টা করলেও আমার দেশের মতো পাবেন না।
শত শত পিসিআর মেশিন এনে গোডাউনে ফেলে রেখেছে অথবা পুরো বরাদ্ধটাই হজম করে ফেলেছে দূর্নীতি বাজ গ্রুপটা। তারাই হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলছে বিদেশি চিকিৎসক-নার্স আনতে। আমার এতোটুকু বিশ্বাস আছে, প্যানডেমিক মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জনস্বাস্থ্যবিধ, ভাইরোলজিস্ট, আইসিইউ স্পেশালিস্ট বাংলাদেশে আছেন।
চিকিৎসক আপনি হসপিটাল ফার্মাসিস্টের দাবী তুলুন। আপনি চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকায়নের দাবী তুলুন। স্বাস্থ্যপেশার মতো মহৎ কাজ সৃষ্টিকর্তার নেয়ামত। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে নেয়ামতকে হেলায় হারানোর সুযোগ নেই। দেশের সকল পেশা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
এফএম নিউজ…
আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী…
বিজ্ঞাপন+বার্তা বিভাগঃ 01831106108