যুগে যুগে বিভিন্ন মহামারীঃ প্রাণ হারিয়েছে কোটি কোটি মানুষ

0
487

প্রতিবেদকঃ শামীমা আফরোজ

স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগ

প্লেগ পৃথিবীর ইতিহাসে ব্ল্যাক ডেথ বা কালো মৃত্যুর মতো আলোচিত মহামারী আর কখনো হয়নি। কালো মৃত্যু বা কালো মড়ক মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি বীভৎস, অমানবিক ও কালো ইতিহাস বহন করছে। পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে পড়া এই মহামারির কবলে পড়ে ১৩৪৬-১৩৫৩ সালের মধ্যে ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের (ইউরেশিয়া) ৭৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।

একাংশের মতে, রোগটি ছিল এক প্রকার গ্রন্থি প্রদাহজনিত প্লেগ। অন্য অংশের দাবি, এই ভয়ানক মহামারী ঘটেছিল ইবোলা ভাইরাসের কারণে। ইঁদুর ছিল এই রোগের প্রধান জীবাণুবাহী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্লেগ মহামারি ১৯০০-১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল। তবে এই ১৯৯৪ সালেও ভারতের ৫টি প্রদেশে প্রায় ৭০০ জন (৫২ জন মৃতসহ) প্লেগে আক্রান্ত হয়।

ডিজিজ এক্স ডিজিজ এক্স নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এর সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কোন ধারণা নেই। আসলেই সেই কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীব্যাপী মহামারী ঘটাতে পারে এমন অসুখের তালিকায় নতুন রহস্যময় অসুখ ‘ডিজিজ এক্স’ এর নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। ডিজিজ এক্স শুনে অপরিচিত মনে হতে পারে। এটি কোনো রোগের নাম নয়। অজানা ভাইরাসের সংক্রমণে হওয়া এই রোগের ব্যাপারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ডিজিজ এক্স হলো এমন কোনো রোগ যা মানবজাতির কাছে এখনো অজানা, কিন্তু তা আন্তর্জাতিকভাবে মহামারীর রূপ নিতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, একটা অজানা রোগে পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক মহামারী দেখা দিতে পারে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে একটি রোগ মহামারী আকার ধারণ করবে, যাতে মানব জাতি বড় এক সংকটে পড়তে পারে। সার্স ও মার্স সার্স অর্থাৎ সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি ভাইরাসের উৎপত্তি চীনে। বিজ্ঞানীরা বলছেন খাটাশ জাতীয় বিড়াল থেকে ভাইরাসটি এসেছে। তবে এটি বাদুড়ের দেহেও পাওয়া গেছে। ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে দুবার এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আট হাজারের বেশি আক্রান্তের মধ্যে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

এরকম আরেকটি ভাইরাস হচ্ছে মার্স। এটি সার্সের একই গোত্রীয় একটি ভাইরাস। ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয় এবং সেখানে আক্রান্তদের ৩৫ শতাংশ মারা গেছেন। এই রোগের নাম দেওয়া হয় মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে মার্স। করোনা ভাইরাস গোত্রীয় বলে ভাইরাসটির নাম মার্স করোনাভাইরাস।

কলেরা ১৮০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে মহামারি আকারে কলেরা শুরু হয়। বলার কথা হলো, কলেরা মহামারিটি প্রথম শুরু হয়েছিল আমাদের বাংলা অঞ্চলে। এ অঞ্চলে এ রোগকে ‘ওলা ওঠা’ নামে ডাকা হতো। কলেরায় এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এখনো প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ এই রোগে প্রাণ হারায়। চীন, রাশিয়া ও ভারতে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৭ সালে ইয়েমেনে এক সপ্তাহে কলেরায় অন্তত ১১৫ জনের মৃত্যু হয়।

গুটিবসন্ত ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম থেকে এ রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু। বিংশ শতাব্দীতে গুটিবসন্তে প্রায় ৫০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আগে গুটিবসন্তে মৃত্যুহার ছিল ৩০ শতাংশ, যদিও এর অধিকাংশ উপাদান ছিল প্রাণঘাতী। তবে এ রোগ আয়ত্তে আসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৭৯ সালে গুটিবসন্ত নির্মূলের ঘোষণা দেয়। তবে গুটিবসন্ত নির্মূল হলেও আমাদের লেখকদের কলমে এই মহামারির সময়গুলো ধরা আছে।

যক্ষ্মা গবেষণা বলছে, গত দুই শতাব্দীতে ১০০ কোটি মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা, ২০২০ সালের মধ্যে ৬ থেকে ৯ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণামতে, ১৯১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৫ কোটি মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর পরিমাণ ১০ কোটির বেশি হতে পারে।

করোনা ভাইরাস করোনাভাইরাস ১৯৬০-এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। প্রথমদিকে মুরগির মধ্যে সংক্রামক “ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস” হিসেবে এটি প্রথম দেখা যায়। পরে সাধারণ সর্দি-হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে পাওয়া ভাইরাস দুটি ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ই’ এবং ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ওসি৪৩’ নামে নামকরণ করা হয়।

তবে অনেকের সন্দেহ যে এই ভাইরাসটি চীন সরকার তার দেশের গরিব জনগনকে শেষ করে দেওয়ার জন্য নিজেরাই তৈরি করে নিজেরাই ছড়িয়ে ছিলো। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ভাইরাসটির আরো বেশ কিছু প্রজাতি পাওয়া যায় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩ সালে ‘এসএআরএস-সিওভি’, ২০০৪ সালে ‘এইচসিওভি এনএল৬৩’, ২০০৫ সালে ‘এইচকেইউ১’, ২০১২ সালে ‘এমইআরএস-সিওভি’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সাল চীনে এসএআরএস-সিওভি-২’ পাওয়া যায়(যা বর্তমানে সাধারণত নোভেল করোনাভাইরাস নামেই পরিচিত। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের ফলে শ্বাসকষ্টের গুরুতর সংক্রমণ দেখা দেয়।

এফএম নিউজ

আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী

বিজ্ঞাপন+বার্তা বিভাগঃ01831106108