বরেণ্য সাহিত্যিক ও পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মবার্ষিকী আজ

0
406

প্রতিবেদকঃ বিপা চৌধুরি

বিনোদন বিভাগ

সত্যজিৎ রায় যিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রকে অনন্য এক মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজ সেই বরেণ্য সাহিত্যিক এবং পরিচালকের শততম জন্মবার্ষিকী। বিরল প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটির জন্ম ১৯২১ সালের ২ মে। কৃতি বংশের যোগ্য উত্তর পুরুষ তিনি। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একমাত্র ঠাকুর পরিবারের সঙ্গেই এই পরিবারের তুলনা করা যায়। সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন বাংলা শিশু সাহিত্যের অন্যতম স্রষ্টা। সাহিত্য ছাড়াও বাংলা ছাপাখানার উন্নতির ক্ষেত্রে তার অবদান অপরিসীম। সত্যজিৎ রায়ই প্রথম দেখিয়েছিলেন চলচ্চিত্রে সংগীতের কতো সার্থক প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব।

পথের পাঁচালীর মধ্য দিয়ে সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে কান ফ্লিম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরষ্কার পাই পথের পাঁচালি। তারপর দেশ বিদেশে পথের পাঁচালির জন্য তিনি জিতেছিলেন একের পর এক পুরুস্কার। এক অখ্যাত বাঙালি তরুন শুধুমাত্র একটি ছবি করেই হয়ে গেলেন জগতবিখ্যাত।

পথের পাঁচালির সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে সত্যজিৎ রায় নির্মাণ করলেন অপরাজিতা। অপু ট্রিলজির দ্বিতীয় ছবি। অপুর কৈশোর জীবনের কাহিনী। অপরাজিতা সাধারন দর্শক গ্রহন করতে না পারলেও ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে পেলো শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার গোল্ডেন লায়ন। এরপর সত্যজিৎ রায় তৈরি করেন অপু ট্রিলজির শেষ ছবি অপুর সংসার। এই ছবি দিয়ে নিয়ে এলেন তিনি তরুন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর চৌদ্দ বছরের কিশোরী শর্মিলা ঠাকুরকে। লন্ডন ফ্লিম ফেস্টিভ্যালে অপুর সংসার পেয়েছিলো শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। এর মধ্যে, অপরাজিতা ছবিটি মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৫৬ সালে।

এই ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে তেমন সাফল্য না পাওয়ার কারণে সত্যজিৎ রায় অপুর সংসারের আগে দুটি ছোটো ছবি তৈরি করেন। একটি ছিলো পরশ পাথর (১৯৫৭) আর একটি জলসাঘর (১৯৫৮) জলসাঘর তারাশংকরের একটি ছোটো গল্প। দুটি ছবিতেই সত্যজিৎ রায়ের প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে। এরপর নির্মাণ করলেন দেবী। হিন্দুদের প্রচলিত বিশ্বাস আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র আঘাত হানলেন সত্যজিৎ রায়। সেইসময় এক শ্রেনির লোক এই ছবির মুক্তির ব্যাপারে তীব্র বিরোধিতা প্রকাশ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত জহরলালের হস্তক্ষেপে সেই ছবি মুক্তি পেয়েছিলো।

রবীন্দ্র কাব্য সত্যজিৎকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাই তিনি রবিন্দ্রনাথের তিনটি ছোটো গল্প অবলম্বনে তৈরি করলেন তিন কন্যা (১৯৬১) মণিহারা, পোস্টমাস্টার আর সমাপ্তি। মেলবোর্ন ফ্লিম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেল তিন কন্যা। সমাপ্তি গল্পেই প্রথম অভিনয় করলেন কিশোরী অপর্ণা সেন। এরপর একে একে নির্মাণ করলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা (১৯৬২) অভিযান (১৯৬২) মহানগর (১৯৬৩) চারুলতা (১৯৬৪) কাপুরুষ ও মহাপুরুষ (১৯৬৫) নায়ক (১৯৬৬)।

নায়ক সত্যজিৎ রায়ের এক সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী ছবি। এক বিখ্যাত অভিনেতার জীবন যন্ত্রণার কাহিনী। ১৯৬৮/৬৯ সালে দাদু উপেন্দ্রকিশোরের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি করেন ছোটোদের ছবি গুপি গাইন বাঘা বাইন। ব্যবসায়িকভাবে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এই ছবিটি। এই ছবির উনিশটি গান তিনি নিজেই রচনা করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের আর একটি বিখ্যাত ছবি আসনি সংকেত। বার্লিন, শিকাগো দুটি চলচ্চিত্র উৎসবেই অশনি সংকেত শ্রেষ্ঠ ছবির পুরষ্কার লাভ করে। মুঞ্চি প্রেম চাঁদের কাহিনী অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় নির্মাণ করেন প্রথম হিন্দি ছবি শতরঞ্জকে খিলাড়ী। এরপর নির্মাণ করেন ঘরে বাইরে, গণশত্রু, শাখা প্রশাখা, শেষ ছবি আগন্তুক।

সত্যজিৎ রায় তার অসামান্য কীর্তির জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরষ্কার। পথের পাঁচালী দিয়ে ১৯৫৬ সালে পান প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার আর তার পরিসমাপ্তি ঘটে ৩০ মার্চ ১৯৯২ অস্কার পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে। তিনি সম্মানিত হয়েছেন নানা ভাবে। নানান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছিলেন ডি লিট উপাধি। তার মধ্যে আছে অক্সফোর্ড, দিল্লি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। শান্তি নিকেতন থেকে পেয়েছেন দেশিকোত্তম। বিশ্ববরেণ্য জাপানী চলচ্চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া তার সম্পর্কে বলেছিলেন, এই পৃথিবীতে বাস করে সত্যজিৎ রায়ের ছবি না দেখা চন্দ্র-সূর্য না দেখার মতই অদ্ভুত ঘটনা।

রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাংস্কৃতিক জগতের অপর কেউই বিশ্বের দরবারে এতোখানি সম্মান পাননি। সত্যজিৎ রায় যখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী তখন তিনি বলেছিলেন, “অস্কার পাওয়ার পর আমার পাওয়ার আর কিছুই রইলো না। জীবনের সব পাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই পুরস্কার পাওয়া মাত্র তেইশ দিন পর এই পার্থিব জীবন থেকে চির বিদায় নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় (২৩ শে এপ্রিল ১৯৯২)। আজ এই বরেণ্য সাহিত্যিক এবং পরিচালকের শততম জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

এফএম নিউজ

আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী

বিজ্ঞাপন+বার্তা বিভাগঃ01831106108