প্রতিবেদকঃ সানজিতা আক্তার সাথী
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিভাগ
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে ফিল্ড হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আধুনিক সুবিধার হাসপাতালটিতে শুধু করোনার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এটিই প্রথম ‘ফিল্ড হাসপাতাল’। হাসপাতালটি স্থাপনে এগিয়ে আসে দেশের অন্যতম বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান নাভানা গ্রুপ।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চট্টগ্রামে ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেন চিকিৎসক বিদ্যুৎ বড়ুয়া। ২১ এপ্রিল সকাল থেকে রোগী দেখার মধ্য দিয়ে হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হয়। হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসকসহ ৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে প্রস্তুত আছেন।
শুক্রবার পর্যন্ত ফিল্ড হাসপাতালে করোনা সন্দেহে দুজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তারা আইসোলেশনে আছেন। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত কি না, তা নিশ্চিত হতে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে একজনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। শনিবার অন্য জনের নমুনা পাঠানো হয়।
চট্টগ্রামে ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোক্তা চিকিৎসক বিদ্যুৎ বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার ছোট ভাই। ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার পোস্ট দেখে নাভানা গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম এগিয়ে আসেন। সাইফুল ইসলাম হাসপাতালটি নির্মাণে প্রতিষ্ঠানটির একটি ভবন ছেড়ে দেন। এটি নাভানা গ্রুপের মোটরসাইকেল ইউনিট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
যুদ্ধের সময়ে সীমিত সামর্থ্য দিয়ে তৈরি হাসপাতালকে ‘ফিল্ড হাসপাতাল’ বলা হয়। করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার এই ক্রান্তিলগ্নে এটিকে ফিল্ড হাসপাতাল নামকরণ করা হয়েছে। দেশে বেসরকারি উদ্যোগে এটি প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। নাভানা গ্রুপের সহযোগিতায় নীরবে হাসপাতালটি তৈরি করা হয় চট্টগ্রামে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া চট্টগ্রাম সিটি গেটের অদূরে নাভানা গ্রুপের মোটরসাইকেল ইউনিটের দ্বিতল ভবনটি ফিল্ড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের ফিল্ড হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসকসহ ৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাস রোগীদের পালাক্রমে সেবা দিচ্ছেন। রোগী পরিবহনের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাসপাতালটির শয্যাসংখ্যা ৬০, যার মধ্যে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট থাকছে। রোগীদের আইসোলেশনে রাখার জন্য আলাদা শয্যা আছে। ফিল্ড হাসপাতালের জন্য পাঁচটি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে। আরও পাঁচটির জন্য ভেন্টিলেটরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনা হচ্ছে বলে নাভানা গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আধুনিক সুবিধা–সংবলিত হাসপাতালটি প্রস্তুত করতে ১৫ দিন লেগেছে বলে জানান বিদ্যুৎ বড়ুয়া।
তিনি বলেন, ‘২১ এপ্রিল থেকে কার্যক্রম শুরু হয়। প্রচুর রোগী আসছেন। আমাদের পাঁচটি আইসিইউর সরঞ্জাম এসেছে। আরও পাঁচটির আসছে। আমরা এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দিতে পারব।’ হাসপাতালটি প্রস্তুত করতে ১৫ দিন লেগেছে। উদ্যোক্তারা জানান, যত দিন প্রয়োজন, তত দিন হাসপাতালের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। করোনা চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর হাসপাতালটি থাকবে কি না, তা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতাল উদ্বোধনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফিল্ড হাসপাতাল দেখতে গেছেন চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র, বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার, জেলা সিভিল সার্জনসহ আরও অনেকে। আধুনিক সুবিধার ব্যবস্থা রাখায় সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেন।
নাভানা গ্রুপের নির্বাহী ও হাসপাতালটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আফফান বিন আনোয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সবুজসংকেত পাওয়ার পরই ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু হয়। চিকিৎসক বিদ্যুৎ বড়ুয়া আরও কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সহযোগিতা নিচ্ছেন। তার ফেসবুক গ্রুপ থেকে এই সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। ওই গ্রুপের সদস্য ১০ হাজার। উদ্যোক্তারা জানান, ২১ এপ্রিল থেকে পালা করে রোগী দেখা শুরু হয়। শুধু করোনা সন্দেহ হলে রোগীকে আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হবে। তবে অন্য রোগীদের কাউন্সেলিং করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সিভিল সার্জন মনে করেন, করোনা মহামারি ঠেকাতে চট্টগ্রামে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, সরকার একা এই মহামারি সামাল দিতে পারবে না। দেশের আরও ধনাঢ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ রকম ফিল্ড হাসপাতাল বানিয়ে করোনা রোগীদের সেবা দিতে পারে। সূত্র: প্রথম আলো
এফএম নিউজ…
আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী…
বিজ্ঞাপন+বার্তা বিভাগঃ01831106108