কে সেই ‘দীপ হাতে রমণী’? সেবার পথিকৃৎ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে জানুন

0
442

প্রতিবেদকঃ বিপা চৌধুরি

স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগ

১৮৫০ সাল। ক্রিমিয়ার প্রান্তরে ইংল্যান্ড এবং রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে। দুই পক্ষেই শত সৈনিক নিহত হচ্ছে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে কুঠুরিতে তৈরি হয়েছে আহত সৈনিকদের জন্য হাসপাতাল। মুমূর্ষ মানুষের আর্তনাদে চারিদিকের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। তার মাঝেই চলছেন, যার কোনো ক্লান্তি নেই, কোনো বিরক্তি নেই, দুচোখ জুড়ে রয়েছে শুধু ভালোবাসা, স্নেহের পরশ। যখনই তিনি কারো পাশে গিয়ে দাঁড়ান, মুহূর্তে সে ভুলে যায় তার সব ব্যথা যন্ত্রণা।

রাতের বেলায় যখন সকলে ঘুমিয়ে পড়েন, তিনি প্রদীপ নিয়ে রোগীদের মধ্যে দেখাশোনা করে বেড়াতেন। দেখতে দেখতে সমস্ত প্রান্তরে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে ‘দীপ হাতে রমণী’। যুদ্ধ শেষ হয়, সৈনিকরা ফিরে যায় নিজের গৃহে, কিন্তু সেই দীপ হাতে রমনীর কাজ শেষ হয় না। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের প্রান্তরে যে কাজের সূচনা তিনি করেন সেই সেবাব্রতকে ছড়িয়ে দেন দেশে দেশে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। মূলত তারই প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে আধুনিক নার্সিং ব্যবস্থা।

সেই মহীয়সী নারীর নাম ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এর জন্ম ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে। তার পিতা মাতা জন্মস্থানের নাম অনুসারে তার নাম রাখেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। নাইটিঙ্গেল এর পিতা ছিলেন অনেক ধনী এবং অভিজাত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। শিক্ষার ব্যাপারে নাইটিঙ্গেলের পিতা ছিলেন অনেক উদার। মেয়েকে তিনি ছবি আঁকা ও সংগীত শেখানোর সাথে সাথে দেশ-বিদেশের নানান ভাষাও শিখান। মাত্র কয়েক বছরে গ্রিক, ল্যাটিন, ইতালিয়ান, ফরাসি, জার্মান ইত্যাদি ভাষা আয়ত্ত করে ফেললেন তিনি।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল শুধু মানুষ নয় কোনো হাঁস মুরগি, গরু, ঘোড়া অসুস্থ হলেও সেবা করতে দ্বিধা করতেন না। নাইটিঙ্গেলের ইচ্ছাই ছিল সেবাকেই জিবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে নিবেন। কিন্তু সেই যুগে নার্সিং পেশাকে পেশা হিসেবে গুরুত্বই দেয়া হতো না। সেই সময় হাসপাতালগুলির অবস্থা ছিল যেমন ভয়াবহ তেমনি করুন। সেবার কাজ সম্পূর্ণই অবহেলিত। সবার কথার অমান্য করে সেবিকা হয়েছিলেন নাইটিঙ্গেল।

লন্ডনের হারলে স্ট্রিটে ডাক্তাররা মেয়েদের জন্য একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন। সর্বপ্রথম সেখানে ফ্লোরেন্স সুপারিনটেনডেন্ট পদে যোগ দিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফ্লোরেন্স এর উপর ব্যাপক দায়িত্বভার অর্পণ করলেন। ফ্লোরেন্স প্রথম নজর দিলেন হাসপাতাল পরিচ্ছন্নতার দিকে, ফ্লোরেন্স এর কাজে আস্তে আস্তে রোগী মৃত্যুর হার কমতে শুরু করে। যখন যেখানে মানুষের অসুস্থতার খবর শুনছেন ছুটে যেতেন ফ্লোরেন্স, সেখানেই তৈরি করতেন একটি করে হাসপাতাল।

এভাবে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ক্রমশ ভেঙে পড়ছিল ফ্লোরেন্স এর শরীর। অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন তিনি। নষ্ট হয়ে যেতে থাকে তার সুন্দর সেই চুল, দেহের সৌন্দর্য। এভাবে, ফ্লোরেন্স এর দেহের কর্মক্ষমতা সর্ম্পূন রূপে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এক সময় শারীরিকভাবে সর্ম্পূন শয্যাশায়ী হয়ে পরলেন তিনি। এরপরও বহু বছর বেচে ছিলেন তিনি। তিনি তার জীবিতকালেই প্রত্যক্ষ করেছেন, তার শিক্ষা সাধনা ব্যর্থ হয়নি।

দেশে দেশে গড়ে উঠেছে র্নাসিং স্কুল। যে পেশা একদিন সবার কাছে ঘৃনিত ছিল সেই পেশা হয়ে উঠেছে আজ পরম সম্মানের। নতুন প্রজন্মের মেয়েরা নাসিং পেশাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহন করছে। অবশেষে, ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট এই মানব দরদী মহীয়সী নারীর মৃত্যু হয়।

তার জন্মদিন ১২ মে এদিনকে  বিশ্ব নার্স দিবস হিসেবে পালন করা হয় বিশ্বব্যাপী।

এফএম নিউজ

আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী

বিজ্ঞাপন+বার্তা বিভাগঃ01831106108