কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায়, “ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত।” অসংখ্য কবি সাহিত্যিক তাদের সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে বসন্তের রূপ এবং সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন আমাদের সামনে। রবীন্দ্রনাথ গেয়েছেন, “ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে, ডালে ডালে ফুলে ফুলে পাতায় পাতায় রে ” বসন্ত মানে চার দিকে ফুলের সমারোহ, বসন্ত মানেই প্রেমের ঋতু। সে জন্যই হয়ত বসন্তকে ঋতুরাজ বসন্ত বলা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের প্রাচীন আরিয়ান জাতির কাছ থেকে এই উৎসবের জন্ম। বসন্ত উৎসবের চিহ্ন পাওয়া যায় যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও কয়েকশো বছর আগে থেকেই। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রঙ খেলায় মেতেছিলেন।

সেই থেকেই বসন্ত ভালোবাসার ঋতু হিসেবে প্রচলিত। হিন্দুদের দোল পূর্ণিমা ও একটি বসন্ত উৎসব। তবে বসন্ত উৎসব এখন আর কোন নির্দিষ্ট ধর্ম বর্ণে সীমাবদ্ধ নেই, হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে দিনটি পালন করে থাকে। বাঙালি সত্তার সাথে বসন্তের এক অপূর্ব যোগ রয়েছে। তাই এই দিনটি পালিত হয় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। মধ্যযুগে সম্রাট আকবর বাংলা বর্ষপঞ্জী হিসেবে আকবরি সন বা ফসলী সনের প্রবর্তন করেন। সেসময় ১৪টি উৎসব পালনেরও রীতি প্রবর্তিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো বসন্ত উৎসব। তখন থেকেই মেলা এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি অনুসরণ করে পালিত হত বসন্ত উৎসব। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশায় সংগীত ও নৃত্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব উদযাপিত হত।

শান্তিনিকেতনের প্রাণ কুঠিরের সামনে প্রথম পালিত হয় এ উৎসব। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বসন্ত উৎসব পালিত হয় ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। পূর্বে দিনটি ১৩ ফেব্রুয়ারি পালিত হলেও পরবর্তীতে, বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ বর্ষপঞ্জি পরিবর্তন করায় দিনটি এখন ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। এখন প্রতিবছরই দিনটি পালিত হয় সারাদেশে ব্যাপক উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে। এই দিনে মেয়েরা বাসন্তি কিংবা হলুদ রঙের শাড়ীর সাথে খোঁপায় পড়ে ফুল, সেই সাথে রেশমি চুড়ি। ছেলেরা পড়ে হলুদ কিংবা সবুজ পাঞ্জাবি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পিঠা পুলির ও আয়োজন করা হয়ে থাকে।
————————–
সামাজিক বাস্তবতার উপর নির্মিত নাটক-শর্ট ফিল্ম দেখতে নিচের ছবিটিতে টাচ করুন করুন-

এফএম নিউজ…
আপনার এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী…
বিজ্ঞাপন+বার্তা বিভাগঃ 01324437783